মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়)প্রকল্প।


(বই বিতরণের একটি মুহুর্ত) 

মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বৃহৎ প্রকল্প। আর্থ সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও শিক্ষা বিস্তারের কাজে মসজিদের ইমাম সাহেবদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সরকার ১৯৯৩ সালে মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় প্রাক-প্রাথমিক এবং ঝরে পড়া (ড্রপ-আউট) কিশোর-কিশোরী ও অক্ষরজ্ঞানহীন বয়স্কদের জন্য মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। এ প্রকল্পের আওতায় এ কার্যক্রমের ইতোমধ্যে ৫টি পর্যায় শেষ করে ৬ষ্ঠ পর্যায় পদাপর্ণ করেছে। প্রকল্পটির আকার পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম দেশের শিক্ষা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যুগোপযোগী ভুমিকা পালন করে আসছে। এ প্রকল্পে মসজিদের ইমামগণ মসজিদ কেন্দ্রে শিশু ও বয়স্ক শিক্ষার্থীদেরকে বাংলা, অংক, ইংরেজী, আরবী, নৈতিকতা ও মূল্যবোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দান করছেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত স্থানে এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তার ও র্কোস সম্পন্নকারীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে। এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী অধিকাংশই সমাজের অবহেলিত, দরিদ্র ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠি। এ শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় প্রতিটি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ জন, সহজ কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ জন ও বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫জন।
ধারাবাহিকভাবে চলমান এ  প্রকল্পটির আওতায় ১ম পর্যায়ে মোট ৯৪ হাজার ৫৯০জন, দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট ৭লক্ষ ২৩ হাজার ৮৮০ জন, ৩য় পর্যায়ে মোট ১৬ লক্ষ ৪৩ হাজার ৪০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদান করা হয়। একই ধারাবাহিকতায় ৪র্থ পর্যায়ে প্রকল্পের মাধ্যমে ২৯ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাক-প্র্রাথমিক ও পবিত্র কুরআন শিক্ষা প্রদান করা হয়। ৫ম পর্যায়ে জানুয়ারী ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১৪ সাল পর্যন্ত মোট ৬৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদান করা হয়েছে,যার অগ্রগতি ১০০%। এ  হিসেবে প্রকল্প কার্যক্রম খরচ অর্থাৎ প্রথম পর্যায় ১৯৯৩ সাল অর্থাৎ প্রকল্পের ১ম পর্যায় হতে ৫ম পর্যায়ের ২০১৪ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক, সহজ কুরআন শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষাস্তরসহ মোট ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৯৩ হাজার ৯৫০ জনকে শিক্ষা দান করা হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে আলেমদের জন্য দীনী দাওয়াতভিত্তিক কর্মসংস্থান এবং সাক্ষরতা হার আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে একনেক কর্তৃক ১ হাজার ৫শত ৯৩ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ রেখে ২০১৫ হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদে ‘মসজিদভিত্তিক শিশু গণশিক্ষা কার্যক্রম’ শীর্ষক  ৬ষ্ঠ পর্যায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। অনুমোদিত প্রকল্পটির মাধ্যমে সারাদেশব্যাপী ৩২ হাজারটি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৪৪ লক্ষ ১০ হাজার জন শিশু শিক্ষার্থীকে অক্ষর জ্ঞানদানসহ নৈতিকতা শিক্ষা প্রদান, ৭৬৮টি বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে সারাদেশে ৯৬ হাজার জন বয়স্ক (পুরুষ, মহিলা এবং জেলখানার কয়েদী) নিরক্ষরকে সাক্ষরতা ও ধর্মীয়  শিক্ষা প্রদান এবং ৪১ হাজারটি সহজ কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৫১ লক্ষ ১০ হাজার জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও ঝরে পড়া কিশোর-কিশোরীদেরকে স্বাক্ষর জ্ঞানদানসহ শুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা ও বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা শিক্ষা প্রদান করাসহ ৩টি শিক্ষা স্তরে ৫ বছর মেয়াদে সর্বমোট ৯৬ লক্ষ ১৬ হাজার জনকে শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৮০ হাজার আলেমের দীনী দাওয়াতভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় তাদের সম্মানী ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪ হাজার ৫শত টাকা করা হয়েছে।
১০১০টি দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক অভিপ্রায় ও দিকনির্দেশনায় প্রকৃত ইসলামী চেতনার মর্মালোকে আরবি ধারায় একটি দ্বীনি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশে একযোগে ১ হাজার ১০টি দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা প্রসূত এক মহতী উদ্যোগের ফসল ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা, র্মমবানী ও চেতনার প্রচার ও প্রসার এবং আরবী ভাষা শিক্ষার অর্পূব সুযোগ তৈরী হয়েছে দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। প্রকৃতপক্ষে কোন সরকার প্রধান কর্তৃক এক সাথে ১ হাজার ১০টি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার ঘটনা ইতিহাসে বিরল। ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সেখানে দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে একদিকে যেমন ৫ সহস্রাধিক উচ্চ শিক্ষিত আলেম-ওলামার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তেমনি লক্ষাধিক শিশু আরবী ভাষায় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দ্বীনি শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।
‘দারুল আরকাম’ নামকরণঃ
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকেই ওহীভিত্তিক শিক্ষা বিস্তারকল্পে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ইসলামের প্রাথমিক স্তরে নব দীক্ষিত মক্কার মুসলমানদেরকে হাতে-কলমে মহান আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা প্রদানের জন্য মক্কার নিকটবর্তী সাফা পাহাড়ের পাদদেশে সাহাবী হযরত আরকাম (রা)-এর ঘরকে নির্বাচন করেন। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মাদ্রাসা হিসেবে যা ‘দারুল আরকাম’ নামে পরিচিত। দারুল আরকাম নামক এ শিক্ষালয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) স্বয়ং শিক্ষকতা করেন। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে দাওয়াত প্রদানের নির্দেশ আসার আগ পর্যন্ত ‘দারুল আরকাম’ নামক এ শিক্ষা নিকেতনে নব দীক্ষিত মুসলমানদের মাঝে রাসূলুল্লাহ (সা) দাওয়াতভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা  করেন। এ শিক্ষা কেন্দ্র থেকেই নবী করীম (সা) কুরাইদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন।
দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পটভূমিঃ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে একনেক সভায় মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদনকালে এ মর্মে সদয় নির্দেশনা প্রদান করেন যে,“বাংলাদেশের যে সকল এলাকায় স্কুল নেই সেখানে এ প্রকল্পের মসজিদভিত্তিক শিক্ষায় অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’’ ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মর্মে মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেন যে,“শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা কারিকুলামে প্রতিটি শিশুর জন্য প্রযোজ্য ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টি স্টাডি/যাচাই করা যেতে পারে।”
১৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে ‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’-এর আওতায় আরবি ভাষা শিক্ষা কোর্স চালুকরণ প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মর্মে সদয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে,“শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানে মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। এখানে কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি আরবী ভাষা শিখলে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে কাজে লাগবে। মসজিদভিত্তিক শিক্ষায় আরবি ভাষা শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।’’
প্রেক্ষিতে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় বিগত ৩ বছর যাবৎ গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় প্রতিটি উপজেলায় ২টি করে মোট ১০১০টি দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়) প্রকল্পটি ২৩ মার্চ ২০১৭ তারিখে ১ম সংশোধন প্রকল্প হিসেবে অনুমোদিত হয়, যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৭২০৪.০০ লক্ষ টাকা। ইতোমধ্যে ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাস থেকে সারাদেশে ১০১০টি দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসা চালু হয়েছে। ১০১০ জন কওমি নেসাব ও ১০১০ জন আলিয়া নেসাবের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা।

No comments:

Post a Comment